১৯৭০ এর দশকের স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থাগুলি উন্নয়নের একটি বড় অংশে পরিণত হয়। ক্ষুদ্র ঋণ এর মূল উদ্দেশ্য ছিল পৃথবীর দরিদ্রদের সাহায্য করা। এভাবে এটি তাদের জীবন উন্নত করার জন্য একটি সমাধান সরবরাহ করবে।
তবে, বর্তমান সময়ে দুঃখজনক সত্য হল ভাল জিনিস ধ্বংস করে আমরা আমাদের সুবিধা অর্জন করতে খুবই দক্ষ। রাইড শেয়ারিং সার্ভিস এর ব্যবহার থেকে শুরু করে সিএনজি মিটার পর্যন্ত, নিয়ম ভাঙ্গার ক্ষেত্রে আমাদের সৃজনশীলতার তুলনা হয় না। বাংলাদেশের মাইক্রোফাইনান্সের ক্ষেত্রেও কিছুটা একই ঘটনা ঘটেছে।
কিভাবে জানবেন আপনার ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাটি সঠিক পথে এগোচ্ছে না?
২০০০ এর দশকে ক্ষুদ্রঋণ শিল্পের বাণিজ্যিকীকরণের সময় অনেকেই ক্ষুদ্রঋণ এর সাথে সংযুক্ত হতে শুরু করে বাণিজ্যিকভাবে পরিচিতি লাভের জন্য। ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলোর বারবার ভুল পথে পরিচালিত হোয়ার পেছনে এটি অন্যতম কারণ। তারা অন্যান্য বিষয়বস্তুকে প্রাধান্য দেয়ে শুরু করে যা সম্পূর্ণরুপে মাইক্রোফাইনান্স থেকে আলাদা।
কিন্তু, বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলি সঠিক পথে পরিচালিত না হওয়ার এটিই কারণ নয়। বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলির ব্যর্থতার পিছনে আরো অনেক কারণ রয়েছে যা তাদেরকে প্রভাবিত করছে। চলুন সেগুলো একবার দেখে নেয়া যাক।
বিবেচনার বিষয়সমূহঃ
বিনিয়োগের আগে সঠিক বাজার গবেষণার অভাব:
বাংলাদেশে বিনিয়োগকারীরা ক্ষুদ্রঋণে সফল না হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হল তারা অর্থ বিনিয়োগের আগে সঠিক বাজার গবেষণা করে না।
এবং যখন তারা ক্ষুদ্রঋণ ‘ব্যবসা’ শুরু করে এবং তাতে সফল হয় না, তখন কেন ব্যবসাটি সমৃদ্ধ হচ্ছে না তা তারা বুঝতে পারে না। যদিও কারণ সুস্পষ্ট।
যখন আপনি ব্যবসা শুরু করবেন বলে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন, তখন যদি তাদের মাইক্রোলোন এর কোন প্রয়জনীয়তা না থাকে তাহলে সম্পূর্ণ ব্যবসার ধারনাটি ব্যর্থ হবে। তাই মাইক্রোফাইনান্সে বিনিয়োগ করার আগে সঠিকভাবে এর বাজার গবেষণা করুন।
সঠিক উদ্দেশ্যের অভাবঃ
একজন ক্ষুদ্রঋণ বিনিয়োগকারী চাইলে একজন ব্যবসায়ী হতে পারে কিন্তু একজন ব্যবসায়ী এর পক্ষে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্রঋণ বিনিয়োগকারী হওয়া কষ্টসাধ্য।
এটি একটি সহজ হিসাব, যদি এই প্রকল্প থেকে টাকা উপার্জনই আপনার একমাত্র উদ্দেশ্য হয় তাহলে আমি বলব মাক্রোফাইনান্স খাতটি আপনার জন্য নয়। ক্ষুদ্রঋণ শিল্প নিজেও এর সাফল্যের জন্য ভুক্তভোগী হয়েছে।
মুনাফা-সন্ধানকারী ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির ব্যাপক বৃদ্ধি খাতে অত্যন্ত কঠোর প্রতিযোগিতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের মুনাফা বাড়াতে এবং ঋণদাতাদের আকৃষ্ট করার জন্য একটি ‘ক্লায়েন্টদের প্রতিযোগিতার’ কাছে আত্মসমর্পণ করার কারণে, এখন বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণের অস্তিত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।
ঋণগ্রহীতাদের নিয়ে যথাযথ গবেষণা করা তেমন গুরুত্ব পাচ্ছিল না। ক্ষুদ্রঋণের সর্বদা দীর্ঘমেয়াদী শত্রু হচ্ছে লোকেরা তাদের ধার করা টাকা ফেরত দিতে অক্ষমতা।
আপনার মাক্রোফাইনান্স প্রতিষ্ঠানের কাজ আরও সহজ করতে চান?
সফটয়্যার সলুউশনে বিনিয়োগ না করাঃ প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে এখন সবকিছু অটোমেশনের মাধ্যমে করা সম্ভব। এবং মাক্রোফাইনান্সও এই ক্যাটাগরি এর মধ্যে পরে। সুখবর হল, বাংলাদেশে এখন অনেক সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমকে আগে চেয়ে সহজ করে তুলতে বিভিন্ন সেবা এবং পণ্য তৈরি করছে।
বাংলাদেশের বৃহত্তম অনেক সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে, দেশের প্রথম CMMI level 5 V2.0 সনদপ্রাপ্ত সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান সাউথটেক অন্যতম। বাংলাদেশের মাইক্রোফাইনান্স এর অগ্রগতিতে সাউথটেক এর মাইক্রোফাইনান্স সফটওয়্যার Ascend Financials এর অবদান যা ধারনা করা হয় তার থেকে অনেক বেশি।
Ascend Financials একটি পরিপূর্ণ মাইক্রোফাইনান্স সফটওয়্যার যা ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলোকে সাহায্য করে আর্থিক সেবার অন্তর্ভূক্ত হতে। ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকগুলির জন্য তৈরি, সাউথটেকের এই সফটওয়্যারটি আপনার দৈনন্দিন জটিলতাগুলিকে সহজ করে। Ascend Financials এর সাহায্যে আপনি শাখাবিহীন ব্যাংকিং, অনলাইন / অফলাইন ডেটা সংগ্রহ পরিষেবা, কাগজের ব্যয় হ্রাস, আপনার গ্রাহকের পোর্টফোলিওর সকল তথ্য পরিচালনা করতে পারবেন এবং এটি একটি সহজ নিয়ন্ত্রণযোগ্য সমাধান।
বাজেটের সীমাবদ্ধতা: আপনি লোকমুখে যাই শুনে থাকুন না কেন, আপনার জানা উচিৎ যে মাইক্রোফাইনান্স প্রচুর বিনিয়োগ নিয়ে শুরু করা যায় এমন কোন সাধারণ বানিজ্যিক ব্যাংক নয়।
ক্ষুদ্রঋণে বিশাল মুনাফা অর্জনের সুযোগ আছে কিন্ত তার জন্য আপনাকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। মানুষকে টাকা ধার দেয়া ব্যাপারটি আসলে এতটা সহজ নয় যতটা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে দেখান হয়। এটি বাংলাদেশে ব্যর্থ হওয়ার একটি বড় কারণ বাজেটের সীমাবদ্ধতা।
বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ এর বিকাশের অপরিসীম সুযোগ রয়েছে। কিন্ত কি ঘটেছে?
আমরা কীভাবে এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে গেলাম যেখানে এখন বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণের অস্তিত্ব সম্পর্কে আমাদের চিন্তিত হতে হচ্ছে? এর একটি অন্যতম কারণ হল, অনেক ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা প্রায়ই সঠিক দিক নির্দেশনা অনুসরণ করে না এবং যার ফলে ব্যর্থ হয়।
বাংদেশে মাইক্রোফাইনান্সের ব্যর্থতার এখন অনেক কারণ থাকতে পারে। এর জন্য আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপকেও অনেকে দোষ দিতে পারেন। এছাড়া, বেশি মুনাফার আশা করা ব্যবসায়ীদেরকেও দোষী করা যেতে পারে।
যাইহোক, একে অন্যকে দোষারোপ করে আমরা এর কোন সমাধান বের করতে পারব না। এটা স্পষ্ট যে মাক্রোফাইনান্স বাংলাদেশে শুধুমাত্র নিজের জায়গা করে নিতে কাজ করেনি বরং এটি ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যও পথ প্রশস্ত করেছে। আমরা এই মূল্যবান বিষয়টিকে হারিয়ে যেতে দিতে পারিনা।
যদিও এখনো সবকিছু আমাদের হাতছাড়া হয়ে যায়নি কিন্ত জিনিসগুলো সংশোধন করার জন্য আমাদের কাছে বেশি সময়ও নেই। কারণ আমারা যদি ২০২৫ সালের লক্ষ্য অর্জন করতে চাই তাহলে জিনিসগুলি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিবর্তন করতে হবে।